ঢাকা ১২:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আফিম উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০৯:২৩:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৪ বার দেখা হয়েছে

দীর্ঘ ৪৫ বছর পর প্রথমবারের মতো দেশের অভ্যন্তরে আফিম উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে সম্প্রতি ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এ সংক্রান্ত একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

ইরানের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন দপ্তর (এফডিএ) জানিয়েছে, দেশের ওষুধ উৎপাদন খাতে ব্যবহারের জন্য আফিম চাষের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এফডিএ-এর মুখপাত্র মোহাম্মদ হাশেমি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, “মরফিন, কোডেইন, পেথিডিনসহ বেশ কয়েকটি জরুরি ওষুধের প্রধান কাঁচামাল আফিম। যদি আফিমের সরবরাহ না থাকে, তাহলে এই ওষুধগুলো উৎপাদন করা সম্ভব হবে না এবং আমাদের ওষুধ খাত সংকটে পড়বে। তাই সবদিক বিবেচনা করে বৈধভাবে আফিম উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।”

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ইরানের বাৎসরিক আফিমের চাহিদা ৫০০ টন। এক সময় এই আফিমের পুরোটাই আসত প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তান থেকে। ২০২১ সালে কাবুল দখলের পর আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার আফিম চাষ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

এই নিষেধজ্ঞা অবশ্য পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। সরকারি আদেশ উপেক্ষা করে এখনও আফিমের উৎপাদন হচ্ছে আফগানিস্তানে; তবে মাত্রা কমে গেছে। তালেবান সরকার নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে আফগানিস্তানে প্রতি বছর ৭৫০ টনেরও বেশি পরিমাণ আফিম উৎপাদিত হতো। এখন তা নেমে এসেছে ২০০ টনে।

ফলে একদিকে আফগান আফিমের দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে, অন্যদিকে বৈধভাবে তা আমাদানিও করতে পারছেন না ইরানের আমদানিকারকরা। দেশটিতে ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থি সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ  মোহাজেরানি বলেছেন, “পশ্চিমা বিশ্ব আমাদের ওপর একের পর এক নিষেধজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। ফলে আমাদের ওষুধসহ অনেক পণ্য দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন করতে হচ্ছে আমাদের। আফিম আমাদনিতে সমস্যা হওয়ার কারণেই এটি চাষের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

ইরানে অবশ্য একসময় সরকারের অনুমোদনসাপেক্ষে আফিমের চাষ হতো। তবে ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর আফিম চাষে নিষেধাজ্ঞা দেয় তৎকালীন সরকার। দেশটির ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ দপ্তর ড্রাগ কন্ট্রোল হেডকোয়ার্টার্স (ডিসিএইচকিউ)-এর সাবেক মহাপরিচালক সাঈদ সেফাতিয়ান ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছেন, তিনি দু’দশক আগেই ইরানের সরকারকে আফিম চাষের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে সাঈদ সেফাতিয়ান বলেন, “ইরানের মাটি এবং আবহাওয়া আফিম চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। তাই যদি সত্যিই দেশে আফিমের চাষ শুরু হয়, তাহলে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বৈধভাবে বিদেশেও আফিম রপ্তানি করা সম্ভব হবে।”

ইরানের একটি বড় সমস্যা হলো মাদকাসক্তি। ২০১০ সালে জাতিসংঘ ইরানকে আফিমের সবচেয়ে বড় ভোক্তা বলে ঘোষণা করেছে। দেশটিতে কত সংখ্যক মানুষ মাদকাসক্ত—সে সংক্রান্ত সাম্প্রতিক তথ্য সহজলভ্য নয়; তবে ২০১৫ সালের একটি সরকারি পরিসংখ্যান বলছে— ইরানে অন্তত ৪৪ লাখ মানুষ নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে মাদক ব্যবহার করেন।

মাদকের অবৈধ ব্যবহার ইস্যুতে অবশ্য ইরানের সরকার কঠোর। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে অনুমোদনহীনভাবে প্রবেশ করা আফিমের ৯০ শতাংশই জব্দ করতে পেরেছিল পুলিশ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুসারে, অবৈধ মাদক ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে প্রায় ৫০০ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল ইরান।

আফিম উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান

প্রকাশিত : ০৯:২৩:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দীর্ঘ ৪৫ বছর পর প্রথমবারের মতো দেশের অভ্যন্তরে আফিম উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে সম্প্রতি ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এ সংক্রান্ত একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

ইরানের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন দপ্তর (এফডিএ) জানিয়েছে, দেশের ওষুধ উৎপাদন খাতে ব্যবহারের জন্য আফিম চাষের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এফডিএ-এর মুখপাত্র মোহাম্মদ হাশেমি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, “মরফিন, কোডেইন, পেথিডিনসহ বেশ কয়েকটি জরুরি ওষুধের প্রধান কাঁচামাল আফিম। যদি আফিমের সরবরাহ না থাকে, তাহলে এই ওষুধগুলো উৎপাদন করা সম্ভব হবে না এবং আমাদের ওষুধ খাত সংকটে পড়বে। তাই সবদিক বিবেচনা করে বৈধভাবে আফিম উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।”

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ইরানের বাৎসরিক আফিমের চাহিদা ৫০০ টন। এক সময় এই আফিমের পুরোটাই আসত প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তান থেকে। ২০২১ সালে কাবুল দখলের পর আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার আফিম চাষ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

এই নিষেধজ্ঞা অবশ্য পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। সরকারি আদেশ উপেক্ষা করে এখনও আফিমের উৎপাদন হচ্ছে আফগানিস্তানে; তবে মাত্রা কমে গেছে। তালেবান সরকার নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে আফগানিস্তানে প্রতি বছর ৭৫০ টনেরও বেশি পরিমাণ আফিম উৎপাদিত হতো। এখন তা নেমে এসেছে ২০০ টনে।

ফলে একদিকে আফগান আফিমের দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে, অন্যদিকে বৈধভাবে তা আমাদানিও করতে পারছেন না ইরানের আমদানিকারকরা। দেশটিতে ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থি সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ  মোহাজেরানি বলেছেন, “পশ্চিমা বিশ্ব আমাদের ওপর একের পর এক নিষেধজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। ফলে আমাদের ওষুধসহ অনেক পণ্য দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন করতে হচ্ছে আমাদের। আফিম আমাদনিতে সমস্যা হওয়ার কারণেই এটি চাষের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

ইরানে অবশ্য একসময় সরকারের অনুমোদনসাপেক্ষে আফিমের চাষ হতো। তবে ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর আফিম চাষে নিষেধাজ্ঞা দেয় তৎকালীন সরকার। দেশটির ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ দপ্তর ড্রাগ কন্ট্রোল হেডকোয়ার্টার্স (ডিসিএইচকিউ)-এর সাবেক মহাপরিচালক সাঈদ সেফাতিয়ান ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছেন, তিনি দু’দশক আগেই ইরানের সরকারকে আফিম চাষের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে সাঈদ সেফাতিয়ান বলেন, “ইরানের মাটি এবং আবহাওয়া আফিম চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। তাই যদি সত্যিই দেশে আফিমের চাষ শুরু হয়, তাহলে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বৈধভাবে বিদেশেও আফিম রপ্তানি করা সম্ভব হবে।”

ইরানের একটি বড় সমস্যা হলো মাদকাসক্তি। ২০১০ সালে জাতিসংঘ ইরানকে আফিমের সবচেয়ে বড় ভোক্তা বলে ঘোষণা করেছে। দেশটিতে কত সংখ্যক মানুষ মাদকাসক্ত—সে সংক্রান্ত সাম্প্রতিক তথ্য সহজলভ্য নয়; তবে ২০১৫ সালের একটি সরকারি পরিসংখ্যান বলছে— ইরানে অন্তত ৪৪ লাখ মানুষ নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে মাদক ব্যবহার করেন।

মাদকের অবৈধ ব্যবহার ইস্যুতে অবশ্য ইরানের সরকার কঠোর। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে অনুমোদনহীনভাবে প্রবেশ করা আফিমের ৯০ শতাংশই জব্দ করতে পেরেছিল পুলিশ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুসারে, অবৈধ মাদক ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে প্রায় ৫০০ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল ইরান।