নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে নীলফামারীর জলঢাকায় টানা তিন দিনের বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় চলতি মৌসুমের আমন ধান ও শীতকালীন আগাম শাক সবজির ক্ষতি হয়েছে।
শুক্রবার সরেজমিনে উপজেলার ১টি পৌরসভা সহ ১১টি ইউনিয়নের বিভিন্ন সফলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ শান্ত আকাশে মেঘ ডাকতে শুরু করে, এর পর শুরু হয় মুশলধারে বৃষ্টি ও সাথে বাতাস। এই বৃষ্টি ও বাতাসে আমন ধান সহ শাক সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি শাক সবজি সহ বিভিন্ন ধরনের রবি শস্যের বেশির ভাগ ক্ষেতই নষ্ট হয়ে গেছে।

বাতাসে নষ্ট হয়েছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। মাঠের পাকা ও আধাপাকা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে। বিশেষ করে উপজেলার কৈমারী, ডাউয়াবাড়ী, শৌলমারী ইউনিয়ন সহ অন্য ইউনিয়নের কয়েক শতাধিক একর ধানক্ষেতের অধিকাংশ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। আশপাশের গ্রাম গুলোতেও ধান ক্ষেতে একই চিত্র দেখা গেছে।
কৃষকেরা জানিয়েছেন, মাঠে আধা পাকা ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে এবং অনেক ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে, ফলে ঘরে ফলন তোলা কঠিন হয়ে পড়েছে।
কৃষকরা আরো জানান আমন ধান কাটার পর জমিতে শীতকালীন সবজির বীজ বপন করেছেন। সারা বছর সবজি চাষের জন্য উঁচু জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি যেমন ফুল কপি, পাতা কপি, শিম, লাউ ইত্যাদি চাষ করা হচ্ছে।
উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের গাবরোল হাজীপাড়া এলাকার কৃষক আতিয়ার রহমান বলেন, ৫ একর জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। ১৫ দিন পর কাটার কথা ছিল। এখন মাঠে পানি জমে শিষ নষ্ট হচ্ছে, ফলন অর্ধেক হয়ে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন শুধু ধান নয়, শীত কালীন সবজি যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ ও আলু ক্ষেতেও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। অনেক ক্ষেতেই পানি জমে থাকার কারণে শিকড় নষ্ট হয়ে গাছ মারা যেতে পারে। কৈমারী ইউনিয়নের গাবরোল হাজী পাড়া গ্রামের কৃষক মুজিবুর রহমান জানান, আমাদের এলাকায় প্রায় ১৫ একর জমির ধান শেষ হয়ে গেছে। ধানের গাছগুলো বাতাসে-বৃষ্টিতে মাটিতে হেলে পড়ে গেছে এবং অনেক ধান ঝরে গেছে। এখন আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।
কৈমারী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, বাতাস ও বৃষ্টিতে ধানের আংশিক কিছু ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। উপজেলার নিচু জমিগুলোতে ধান হেলে পড়েছে এবং কিছু এলাকায় পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ধানের গোড়া পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় কৃষক সমাজের দাবি, এই ক্রান্তিলগ্নে কৃষকদের পাশে থেকে সঠিক দিকনির্দেশনা ও সহায়তা দেওয়া জরুরি, যাতে ক্ষতির মাত্রা কমানো যায়।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, উপজেলার মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শুরু করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের পরিমাণ নিরূপণ করে দ্রুত প্রণোদনা ও পুনর্বাসনের জন্য রিপোর্ট প্রণয়ন করা হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, “নিম্নচাপের প্রভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া হয়েছে। কিছু এলাকায় ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা কৃষকদের দ্রুত পানি নিষ্কাশন, নুয়ে পড়া ধানগাছ বাঁধা এবং অতিরিক্ত পানি জমতে না দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আবহাওয়া অনুকূলে এলে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।”

ডেস্ক রিপোর্ট 




















