ঢাকা ১১:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

শেরপুরে বৃষ্টি-ঝড়ো হাওয়ায় ৫৫ হেক্টর আমন ধান ও সবজি খেত ক্ষতিগ্রস্ত

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০৭:০১:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫
  • ৮ বার দেখা হয়েছে

শেরপুর প্রতিনিধি:

শেরপুরে গত তিনদিনের মাঝারি বৃষ্টিপাত ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে উঠতি আমন ধান ও শীতকালীন সবজি খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় ধানগাছ ও শাক-সবজির চারা হেলে পড়েছে। সেইসঙ্গে বৃষ্টির আগে কেটে খেতে বিছিয়ে রাখা ধানগুলো পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে।
জেলার কৃষি বিভাগ বলছে, আমন ধান, সবজি ও গোল আলু মিলে মোট ৫৫ হেক্টর জমির আবাদ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে যাবে। তবে সরেজমিনে গেলে কৃষকরা বলছেন, প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হবে।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে শেরপুর জেলায় ৯৩ হাজার ৬৯৩ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এবার বর্ষা মৌসুমে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় আমন ধানের ভালো ফলনের আশা করেছিলেন কৃষকেরা। কিন্তু গত দুইদিনের অব্যাহত বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেক ধান খেতে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে এবং ধানগাছগুলো মাটিতে হেলে পড়েছে। নিচু এলাকার অনেক খেতের ধানগাছ পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে ঘরে ফসল তোলার আগ মুহূর্তে আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় অনেক কৃষক দুশ্চিন্তা ও হতাশায় ভুগছেন।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের মধ্যবয়ড়া ও লছমনপুর ইউনিয়নের ঝাউয়েরচর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টানা বৃষ্টি ও বাতাসে ফসলের মাঠে পানি। কাঁচা ও আধাপাকা শীষসহ হেলে পড়েছে ধানগাছ। এছাড়া ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলাসহ কিছু জমি ডুবে গেছে।


মধ্যবয়ড়া গ্রামের কৃষক মো. ফারুক ইসলাম বলেন, তিনি ২ একর জমিতে আমন ধান আবাদ করেছিলেন। টানা বৃষ্টিতে এক একর জমির ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। এসব জমিতে অর্ধেকও ফলন হবে না। এছাড়া কারেন্ট পোকার আক্রমণও হয়েছে। সব মিলিয়ে এবার ক্ষতিগ্রস্ত তিনি। একই এলাকার কৃষক মো. ফকির আলী বলেন, চার-পাঁচদিন আগে ফুলকপি রোপণ করেছিলাম। এখন পুরো জমিই বৃষ্টির পানির নিচে চলে গেছে। আবাদ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।
একই এলাকার আরেক কৃষক নায়েব আলী বলেন, কিছুদিনের মধ্যেই আমন ধানের কাটা-মাড়াই শুরু হবে। তার আগে বৃষ্টি ও বাতাসে পাকা ধানগাছগুলো হেলে পড়েছে। জমিতে পানি জমে ধান ঝরে যাচ্ছে। এখন ফসল কেটে ঘরে তোলাই মুশকিল। তার ১৬ কাঠা জমির মধ্যে ৬ কাঠা জমির ধান হেলে পড়েছে। বৃষ্টির ফলে এখন ধান কেটে নেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।
শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরী গ্রামের কৃষক কবির জানান, এই অবস্থায় ধান কেটে নিলেও শুকানো যাবে না। ফলে ভেজা ধান ঘরে তোলা মুশকিল হবে। রোদ না উঠলে কিছুদিন এভাবে থাকলে আমন ধান আবাদ করতে যে টাকা খরচ করেছেন তা ওঠাতে পারবেন না।


শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার কয়েকজন কৃষক জানান, গত বছর ভয়াবহ বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তাদের আমন আবাদ সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছিল এবং আর্থিকভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছিল। কিন্তু অসময়ে বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে নিচু জমির ফসল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ধান সঠিকভাবে ঘরে তুলতে না পারলে সামনের দিনগুলোয় সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়বে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শেরপুরে শনি ও রোববার যথাক্রমে ১৩৫ মিলিমিটার ও ১০ দশমিক ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে এবং সংলগ্ন উজানে ভারতের প্রদেশসমূহে মাঝারি-ভারী থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তিনিসহ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বৈরী আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকার আমন আবাদ সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন।


কৃষি বিভাগের প্রাথমিক হিসেবে, জেলায় ৩০ হেক্টর জমির আমন আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর শাক-সবজি ও আলুর আবাদ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৫ হেক্টর জমিতে। তবে আর বৃষ্টি না হলে এবং রোদ ওঠে গেলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে না। এছাড়া সামনে প্রণোদনা কর্মসূচি এলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

শেরপুরে বৃষ্টি-ঝড়ো হাওয়ায় ৫৫ হেক্টর আমন ধান ও সবজি খেত ক্ষতিগ্রস্ত

প্রকাশিত : ০৭:০১:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫

শেরপুর প্রতিনিধি:

শেরপুরে গত তিনদিনের মাঝারি বৃষ্টিপাত ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে উঠতি আমন ধান ও শীতকালীন সবজি খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় ধানগাছ ও শাক-সবজির চারা হেলে পড়েছে। সেইসঙ্গে বৃষ্টির আগে কেটে খেতে বিছিয়ে রাখা ধানগুলো পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে।
জেলার কৃষি বিভাগ বলছে, আমন ধান, সবজি ও গোল আলু মিলে মোট ৫৫ হেক্টর জমির আবাদ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে যাবে। তবে সরেজমিনে গেলে কৃষকরা বলছেন, প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হবে।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে শেরপুর জেলায় ৯৩ হাজার ৬৯৩ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এবার বর্ষা মৌসুমে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় আমন ধানের ভালো ফলনের আশা করেছিলেন কৃষকেরা। কিন্তু গত দুইদিনের অব্যাহত বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেক ধান খেতে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে এবং ধানগাছগুলো মাটিতে হেলে পড়েছে। নিচু এলাকার অনেক খেতের ধানগাছ পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে ঘরে ফসল তোলার আগ মুহূর্তে আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় অনেক কৃষক দুশ্চিন্তা ও হতাশায় ভুগছেন।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের মধ্যবয়ড়া ও লছমনপুর ইউনিয়নের ঝাউয়েরচর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টানা বৃষ্টি ও বাতাসে ফসলের মাঠে পানি। কাঁচা ও আধাপাকা শীষসহ হেলে পড়েছে ধানগাছ। এছাড়া ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলাসহ কিছু জমি ডুবে গেছে।


মধ্যবয়ড়া গ্রামের কৃষক মো. ফারুক ইসলাম বলেন, তিনি ২ একর জমিতে আমন ধান আবাদ করেছিলেন। টানা বৃষ্টিতে এক একর জমির ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। এসব জমিতে অর্ধেকও ফলন হবে না। এছাড়া কারেন্ট পোকার আক্রমণও হয়েছে। সব মিলিয়ে এবার ক্ষতিগ্রস্ত তিনি। একই এলাকার কৃষক মো. ফকির আলী বলেন, চার-পাঁচদিন আগে ফুলকপি রোপণ করেছিলাম। এখন পুরো জমিই বৃষ্টির পানির নিচে চলে গেছে। আবাদ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।
একই এলাকার আরেক কৃষক নায়েব আলী বলেন, কিছুদিনের মধ্যেই আমন ধানের কাটা-মাড়াই শুরু হবে। তার আগে বৃষ্টি ও বাতাসে পাকা ধানগাছগুলো হেলে পড়েছে। জমিতে পানি জমে ধান ঝরে যাচ্ছে। এখন ফসল কেটে ঘরে তোলাই মুশকিল। তার ১৬ কাঠা জমির মধ্যে ৬ কাঠা জমির ধান হেলে পড়েছে। বৃষ্টির ফলে এখন ধান কেটে নেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।
শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরী গ্রামের কৃষক কবির জানান, এই অবস্থায় ধান কেটে নিলেও শুকানো যাবে না। ফলে ভেজা ধান ঘরে তোলা মুশকিল হবে। রোদ না উঠলে কিছুদিন এভাবে থাকলে আমন ধান আবাদ করতে যে টাকা খরচ করেছেন তা ওঠাতে পারবেন না।


শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার কয়েকজন কৃষক জানান, গত বছর ভয়াবহ বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তাদের আমন আবাদ সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছিল এবং আর্থিকভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছিল। কিন্তু অসময়ে বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে নিচু জমির ফসল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ধান সঠিকভাবে ঘরে তুলতে না পারলে সামনের দিনগুলোয় সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়বে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শেরপুরে শনি ও রোববার যথাক্রমে ১৩৫ মিলিমিটার ও ১০ দশমিক ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে এবং সংলগ্ন উজানে ভারতের প্রদেশসমূহে মাঝারি-ভারী থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তিনিসহ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বৈরী আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকার আমন আবাদ সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন।


কৃষি বিভাগের প্রাথমিক হিসেবে, জেলায় ৩০ হেক্টর জমির আমন আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর শাক-সবজি ও আলুর আবাদ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৫ হেক্টর জমিতে। তবে আর বৃষ্টি না হলে এবং রোদ ওঠে গেলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে না। এছাড়া সামনে প্রণোদনা কর্মসূচি এলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।