ঢাকা ০৬:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫

মৌলভীবাজারে চামড়া নির্ধারিত দামে বিক্রি হয়নি

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ১১:২৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ জুন ২০২৫
  • ৭৫ বার দেখা হয়েছে

মৌলভীবাজার জেলাজুড়ে কুরবানির পশুর চামড়া সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হয়নি। আড়তদাররা মানেননি সরকার নির্ধারিত দাম। সিন্ডিকেট চক্র ইচ্ছা মতো দাম নির্ধারণ করে কম দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীদের।

 

অভিযোগ উঠেছে, মাত্র গুটিকয়েক আড়তদার সিন্ডিকেট গড়ে মৌলভীবাজার জেলার চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এতে চামড়ার প্রকৃত মূল্য না পেয়ে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তদারকির অভাবে সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর হয়নি বলে অভিযোগ তাদের।

সরকার প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করলেও আড়তদাররা সেটি মানছেন না। ঈদের দিন শনিবার (৭ জুন) বিকেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরের স্টেশন রোডসসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, শত শত মৌসুমী ব্যবসায়ী ট্রাক, রিকশা ও অটোভ্যানে করে চামড়া নিয়ে এসেছেন। কিন্তু আড়তদাররা ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকায় প্রতিটি গরুর চামড়া কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

 

গরুর চামড়া ৫০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ছাগলের চামড়া কেউ বিক্রিই করতে পারেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

শহরের হাজী সোনা মিয়া সুরজান বিবি আলিয়া মাদ্রাসা ও বায়তুল আমান দারুল উলুম মাদ্ররাসা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহিন আহমেদ বলেন, আমাদের মাদ্রাসায় এবার শতাধিক চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু গড়ে সর্বোচ্চ ৩০০ দরে প্রতি পিস চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। ভেবেছিলাম এবার সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দামে বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য পাব, কিন্তু সিন্ডিকেট থেকেই গেল। একটি সিন্ডিকেট তাদের মনোপলি দিয়ে ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করছে। সরকারের নির্ধারিত মূল্য কার্যকর করা যাচ্ছে না। অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে

মৌলভীবাজার শহরের মুসলিম কোয়ার্টার এলাকার মুহিবুল ইসলাম জানান, তিনি এবার ১ লাখ ৯০ হাজার টাকায় কেনা গরুর চামড়া ২০০ টাকায় বিক্রি করেছেন

 

সদর ইউনিয়নের ভাড়াউড়া এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী খলিল মিয়া ও আরেক চামড়া ব্যবসায়ি রফিকু মিয়া জানান, তারা স্টেশন রোডসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকশ চামড়া কিনেছেন। প্রতি পিস চামড়া কিনেছেন ৮০-২৫০ টাকা দরে।

 

তারা বলেন, চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণ ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রতিটি চামড়ায় ৪০০-৫০০ টাকা খরচ পড়ে। তাই সরকারের নির্ধারিত দামে চামড়া কেনা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। সরকার যে দর নির্ধারণ করেছে এর অর্ধেক দামেও যদি সরকার কিনে আমি বিক্রি করব।

জেলার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমরা যে দামে চামড়া কিনেছি এই দামে আড়তদাররা কিনছেন না, আমরাও লোকসানের শিকার। চামড়া বাজারের এই নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।

 

মৌলভীবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার মৌলভীবাজার জেলায় ৭০ হাজারের বেশি হাজার গবাদি পশু কোরবানি দেওয়া হয়েছে। অথচ এই বিশাল চামড়া বাজারে কার্যকর কোনো মনিটরিং ছিল না। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষ থেকেও তৎপরতা না থাকায় বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ঠেকানো যায়নি।

 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. ইসরাঈল হোসেন বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রি করার জন্য চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি ঢাকায় জানিয়েছি। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট গিয়েছিলেন। তারা জানিয়েছে চামড়া ৩০০-৪০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, গত বছর যে চামড়া ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল এ বছর সে চামড়া ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এতো বছরের জঞ্জাল এক বছরে শেষ করা কঠিন। আশা করি আগামী বছর চামড়ার মূল্য আরও বৃদ্ধি পাবে। মৌলভীবাজারে একটি চামড়া ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।

মৌলভীবাজারে চামড়া নির্ধারিত দামে বিক্রি হয়নি

প্রকাশিত : ১১:২৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ জুন ২০২৫

মৌলভীবাজার জেলাজুড়ে কুরবানির পশুর চামড়া সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হয়নি। আড়তদাররা মানেননি সরকার নির্ধারিত দাম। সিন্ডিকেট চক্র ইচ্ছা মতো দাম নির্ধারণ করে কম দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীদের।

 

অভিযোগ উঠেছে, মাত্র গুটিকয়েক আড়তদার সিন্ডিকেট গড়ে মৌলভীবাজার জেলার চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এতে চামড়ার প্রকৃত মূল্য না পেয়ে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তদারকির অভাবে সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর হয়নি বলে অভিযোগ তাদের।

সরকার প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করলেও আড়তদাররা সেটি মানছেন না। ঈদের দিন শনিবার (৭ জুন) বিকেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরের স্টেশন রোডসসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, শত শত মৌসুমী ব্যবসায়ী ট্রাক, রিকশা ও অটোভ্যানে করে চামড়া নিয়ে এসেছেন। কিন্তু আড়তদাররা ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকায় প্রতিটি গরুর চামড়া কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

 

গরুর চামড়া ৫০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ছাগলের চামড়া কেউ বিক্রিই করতে পারেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

শহরের হাজী সোনা মিয়া সুরজান বিবি আলিয়া মাদ্রাসা ও বায়তুল আমান দারুল উলুম মাদ্ররাসা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহিন আহমেদ বলেন, আমাদের মাদ্রাসায় এবার শতাধিক চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু গড়ে সর্বোচ্চ ৩০০ দরে প্রতি পিস চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। ভেবেছিলাম এবার সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দামে বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য পাব, কিন্তু সিন্ডিকেট থেকেই গেল। একটি সিন্ডিকেট তাদের মনোপলি দিয়ে ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করছে। সরকারের নির্ধারিত মূল্য কার্যকর করা যাচ্ছে না। অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে

মৌলভীবাজার শহরের মুসলিম কোয়ার্টার এলাকার মুহিবুল ইসলাম জানান, তিনি এবার ১ লাখ ৯০ হাজার টাকায় কেনা গরুর চামড়া ২০০ টাকায় বিক্রি করেছেন

 

সদর ইউনিয়নের ভাড়াউড়া এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী খলিল মিয়া ও আরেক চামড়া ব্যবসায়ি রফিকু মিয়া জানান, তারা স্টেশন রোডসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকশ চামড়া কিনেছেন। প্রতি পিস চামড়া কিনেছেন ৮০-২৫০ টাকা দরে।

 

তারা বলেন, চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণ ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রতিটি চামড়ায় ৪০০-৫০০ টাকা খরচ পড়ে। তাই সরকারের নির্ধারিত দামে চামড়া কেনা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। সরকার যে দর নির্ধারণ করেছে এর অর্ধেক দামেও যদি সরকার কিনে আমি বিক্রি করব।

জেলার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমরা যে দামে চামড়া কিনেছি এই দামে আড়তদাররা কিনছেন না, আমরাও লোকসানের শিকার। চামড়া বাজারের এই নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।

 

মৌলভীবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার মৌলভীবাজার জেলায় ৭০ হাজারের বেশি হাজার গবাদি পশু কোরবানি দেওয়া হয়েছে। অথচ এই বিশাল চামড়া বাজারে কার্যকর কোনো মনিটরিং ছিল না। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষ থেকেও তৎপরতা না থাকায় বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ঠেকানো যায়নি।

 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. ইসরাঈল হোসেন বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রি করার জন্য চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি ঢাকায় জানিয়েছি। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট গিয়েছিলেন। তারা জানিয়েছে চামড়া ৩০০-৪০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, গত বছর যে চামড়া ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল এ বছর সে চামড়া ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এতো বছরের জঞ্জাল এক বছরে শেষ করা কঠিন। আশা করি আগামী বছর চামড়ার মূল্য আরও বৃদ্ধি পাবে। মৌলভীবাজারে একটি চামড়া ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।