ঢাকা ১০:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

পটুয়াখালীর শারিকখারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিনের ঘরে চলছে পাঠদান

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০৪:১৮:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
  • ৬৬ বার দেখা হয়েছে

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
বিদ্যালয়ের ভবনটি ছাদ পলেস্তরা খসে রড বেরিয়ে পড়েছে। বীমেরও একই অবস্থা । রডে মরিচা ধরেছে। স্কুল ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে ঘোষনা করা হয়েছে। এই অবস্থায় বিদ্যালয়ের কেমালমতি শিশুদের পাঠদানের জন্য পাশেই টিন দিয়ে ছাপড়ার ব্যবস্থা করে সেখানে পাঠদান হচ্ছে। এতে করে রোদে প্রচন্ড গরম সহ্য করতে হচ্ছে। আবার সামান্য বৃষ্টিতেই থেমে যায় পাঠদান। বৃষ্টির ঝাপটা ও টিউর ওপর বৃষ্টির শব্দে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে পটুয়াখালীর কালিকাপুর ইউনিয়নের ১৭০ নং পশ্চিম শারিকখারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
গত রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে একটি পুরনো পাকা ভবনটিতে ঝুকিঁপূর্ণ ব্যানার ঝোলানো হয়েছে। ভবনের দেয়াল, পিলার, ছাদ, বিম সবখানেই ফাটল। ভবনের পশ্চিম পাশে নতুন দুইটি টিনের ঘরে পাঠিদান চলছে। বিদ্যালয়টি ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও পাকা ভবনটি নির্মিত হয় ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে। ওই ভবনটিতে রয়েছে একটি অফিস কক্ষ ও তিনটি শ্রেণিকক্ষ। এই ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এর পর বিদ্যালয়টির সংস্কার না হয়নি। এখন ভবনের ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ে রড বেরিয়ে রয়েছে। বিমেরও একই অবস্থা রড বেরিয়ে রয়েছে । ধরছে ধরেছে মরিচা।
এদিকে গত ২১ মে পটুয়াখালীর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতিমা বেগম বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, জরাজীর্ণ ও পরিত্যাক্ত ঘোষনার সাইনবোর্ড টানানোর নির্দেশ দিন এছাড়্ওা এই বিদ্যালয় ভবনে শিক্ষক, শিক্ষার্থী কেউই প্রবেশ না করার জন্য প্রধান শিক্ষককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি। যা পরিদর্শন বইতে তিনি উল্লেখ করেছেন। সেটিকে বিদ্যালয়ের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যবহার বন্ধ রাখা হয়েছে।
এর পর বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৬টি শ্রেণির পাঠদানের জন্য ওই ভবনের পশ্চিম পাশে দুইটি টিনের ছোট ছাপড়া ঘর নির্মাণ করে শ্রেণিকক্ষ বানিয়ে পাঠদান শুরু হয়। ।
সরেজমিন দেখা যায় শ্রেনিকক্ষে পাঠদানের সময় প্রচন্ড বৃষ্টির শব্দে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনোযোগ হারাচ্ছে। ঘরের পাশের জানালা দিয়ে বৃষ্টির ঝাপটা এসে লাগছে শিক্ষার্থীদের শরীরে। বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আমিনুল ইসলাম বলে, বৃষ্টি হইলে তা টিনের ওপর পড়েপ্রচন্ড শব্দ হয়। এছাড়াও বাতাসে বৃষ্টির ঝাপটা তাদের গায়ে লাগে। এসময় বইখাতাসহ শরীরে যাতে পানি না লাগে এর দিকেই খেয়াল চলে যায়।
তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সোহান বলে, গরমেও কস্ট হয়। রোদে ঘরের টিনের চালা গরম হয়ে তার তাপ তালে শরীরে। আগে স্যারেরা ফ্যান লাগাইছিল। কিন্তু এখন তা নাই।
ইশরাত জাহান কলি নামে এক অভিভাবক জানায়, তার মেয়ে তানহা বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে পড়ছে। ‘ শিশু শিক্ষার্থীদের সুন্দর শ্রেনিকক্ষই তাদের লেখাপড়ায় আগ্রহ সৃষ্টি করে। এর আগে পাকা ভবনের শ্রেণিকক্ষটি ছিলো সাজানো গোছানো। কিন্তু এখন টিনের খোলামেলা একটি শ্রেণিকক্ষ পাঠদান চলছে। এতে করে শিক্ষার গুণগত মানের জন্য বড় বাধা। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখা এমন পরিবেশে সম্ভব নয়। শিক্ষার মান উন্নয়নে দ্রুত নতুন ভবন তৈরি জরুরী বলে মনে করেন তিনি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহ্বুবুল নেছা বলেন, বিদ্যালয়ে বর্তমানে ছয়জন শিক্ষক ও ১৫৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয় ভবন পরিত্যাক্ত ঘোষনার পর বিকল্প হিসেবে টিনের ঘর নির্মাণ করে শ্রেনি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, রোদের সময় শ্রেনিকক্ষ গরমে পাঠদান বিঘিœত হওয়ায় ৬ টি বৈদ্যুতিক পাখা বসানো হয়েছিল। কিন্তু সেই বৈদ্যুতিক পাখাগুলো চুরি হয়ে গেছে। এখন বর্ষাকাল, বৃষ্টি নামলে টিনের ওপর পড়া বৃষ্টির শন্দ ও ঝাপটায় ক্লামে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ থাকছে না। গত দুই মাস ধরে এই ভাবেই শ্রেণিকার্যক্রম চলছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে নতুন ভবনের চাহিদা জমা দিয়েছি। দ্রুত ভবন বরাদ্দ না পেলে শিক্ষা কার্যক্রমে অনেক ক্ষতি হবে।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোল্লা বখতিয়ার রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা অবগত। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ক্লাস নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশেই টিনের ঘরে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।
তিনি জানান , শারিকখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই নতুন ভবন নির্মাণে বরাদ্দ পাওয়া যাবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

পটুয়াখালীর শারিকখারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিনের ঘরে চলছে পাঠদান

প্রকাশিত : ০৪:১৮:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
বিদ্যালয়ের ভবনটি ছাদ পলেস্তরা খসে রড বেরিয়ে পড়েছে। বীমেরও একই অবস্থা । রডে মরিচা ধরেছে। স্কুল ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে ঘোষনা করা হয়েছে। এই অবস্থায় বিদ্যালয়ের কেমালমতি শিশুদের পাঠদানের জন্য পাশেই টিন দিয়ে ছাপড়ার ব্যবস্থা করে সেখানে পাঠদান হচ্ছে। এতে করে রোদে প্রচন্ড গরম সহ্য করতে হচ্ছে। আবার সামান্য বৃষ্টিতেই থেমে যায় পাঠদান। বৃষ্টির ঝাপটা ও টিউর ওপর বৃষ্টির শব্দে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে পটুয়াখালীর কালিকাপুর ইউনিয়নের ১৭০ নং পশ্চিম শারিকখারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
গত রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে একটি পুরনো পাকা ভবনটিতে ঝুকিঁপূর্ণ ব্যানার ঝোলানো হয়েছে। ভবনের দেয়াল, পিলার, ছাদ, বিম সবখানেই ফাটল। ভবনের পশ্চিম পাশে নতুন দুইটি টিনের ঘরে পাঠিদান চলছে। বিদ্যালয়টি ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও পাকা ভবনটি নির্মিত হয় ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে। ওই ভবনটিতে রয়েছে একটি অফিস কক্ষ ও তিনটি শ্রেণিকক্ষ। এই ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এর পর বিদ্যালয়টির সংস্কার না হয়নি। এখন ভবনের ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ে রড বেরিয়ে রয়েছে। বিমেরও একই অবস্থা রড বেরিয়ে রয়েছে । ধরছে ধরেছে মরিচা।
এদিকে গত ২১ মে পটুয়াখালীর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতিমা বেগম বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, জরাজীর্ণ ও পরিত্যাক্ত ঘোষনার সাইনবোর্ড টানানোর নির্দেশ দিন এছাড়্ওা এই বিদ্যালয় ভবনে শিক্ষক, শিক্ষার্থী কেউই প্রবেশ না করার জন্য প্রধান শিক্ষককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি। যা পরিদর্শন বইতে তিনি উল্লেখ করেছেন। সেটিকে বিদ্যালয়ের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যবহার বন্ধ রাখা হয়েছে।
এর পর বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৬টি শ্রেণির পাঠদানের জন্য ওই ভবনের পশ্চিম পাশে দুইটি টিনের ছোট ছাপড়া ঘর নির্মাণ করে শ্রেণিকক্ষ বানিয়ে পাঠদান শুরু হয়। ।
সরেজমিন দেখা যায় শ্রেনিকক্ষে পাঠদানের সময় প্রচন্ড বৃষ্টির শব্দে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনোযোগ হারাচ্ছে। ঘরের পাশের জানালা দিয়ে বৃষ্টির ঝাপটা এসে লাগছে শিক্ষার্থীদের শরীরে। বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আমিনুল ইসলাম বলে, বৃষ্টি হইলে তা টিনের ওপর পড়েপ্রচন্ড শব্দ হয়। এছাড়াও বাতাসে বৃষ্টির ঝাপটা তাদের গায়ে লাগে। এসময় বইখাতাসহ শরীরে যাতে পানি না লাগে এর দিকেই খেয়াল চলে যায়।
তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সোহান বলে, গরমেও কস্ট হয়। রোদে ঘরের টিনের চালা গরম হয়ে তার তাপ তালে শরীরে। আগে স্যারেরা ফ্যান লাগাইছিল। কিন্তু এখন তা নাই।
ইশরাত জাহান কলি নামে এক অভিভাবক জানায়, তার মেয়ে তানহা বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে পড়ছে। ‘ শিশু শিক্ষার্থীদের সুন্দর শ্রেনিকক্ষই তাদের লেখাপড়ায় আগ্রহ সৃষ্টি করে। এর আগে পাকা ভবনের শ্রেণিকক্ষটি ছিলো সাজানো গোছানো। কিন্তু এখন টিনের খোলামেলা একটি শ্রেণিকক্ষ পাঠদান চলছে। এতে করে শিক্ষার গুণগত মানের জন্য বড় বাধা। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখা এমন পরিবেশে সম্ভব নয়। শিক্ষার মান উন্নয়নে দ্রুত নতুন ভবন তৈরি জরুরী বলে মনে করেন তিনি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহ্বুবুল নেছা বলেন, বিদ্যালয়ে বর্তমানে ছয়জন শিক্ষক ও ১৫৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয় ভবন পরিত্যাক্ত ঘোষনার পর বিকল্প হিসেবে টিনের ঘর নির্মাণ করে শ্রেনি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, রোদের সময় শ্রেনিকক্ষ গরমে পাঠদান বিঘিœত হওয়ায় ৬ টি বৈদ্যুতিক পাখা বসানো হয়েছিল। কিন্তু সেই বৈদ্যুতিক পাখাগুলো চুরি হয়ে গেছে। এখন বর্ষাকাল, বৃষ্টি নামলে টিনের ওপর পড়া বৃষ্টির শন্দ ও ঝাপটায় ক্লামে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ থাকছে না। গত দুই মাস ধরে এই ভাবেই শ্রেণিকার্যক্রম চলছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে নতুন ভবনের চাহিদা জমা দিয়েছি। দ্রুত ভবন বরাদ্দ না পেলে শিক্ষা কার্যক্রমে অনেক ক্ষতি হবে।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোল্লা বখতিয়ার রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা অবগত। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ক্লাস নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশেই টিনের ঘরে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।
তিনি জানান , শারিকখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই নতুন ভবন নির্মাণে বরাদ্দ পাওয়া যাবে।